শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভেড়ামারায় কমেছে ডিম-মাংসের উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ | প্রিন্ট

ভেড়ামারায় কমেছে ডিম-মাংসের উৎপাদন

প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। ডিম ও মাংসের উৎপাদনও কমেছে অনেক। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার খামারিরা। ঘরের চালে পানি দিয়ে, বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেও মুরগি সুস্থ রাখতে পারছেন না তারা। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ভেড়ামারাতেও মাসব্যাপী চলছে তীব্র দাবদাহ। এই অসহনীয় গরমে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ। দাবদাহ থেকে রেহাই পাচ্ছে না অন্যান্য জীব-জন্তুও।

হিটস্ট্রোকের কারণে ভেড়ামারা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন পোলট্রি খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পোলট্রি ফার্মের মালিক ও প্রান্তিক খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে ডিম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং মুরগির মাংস উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

সরেজমিনে ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন পোলট্রি হ্যাচারি ও ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে খামারিরা মুরগি সুস্থ রাখতে ঘরের চালে মোটরের মাধ্যমে সব সময় পানি ছিটানোর পাশাপাশি বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া তাপ সহিষ্ণু করতে মুরগিকে খাওয়ানো হচ্ছে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় নানা ওষুধ। এতে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপরও রোদের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগি অসুস্থ হয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে খামারিদের
লোকসানও বেড়ে দ্বিগুণ।

এ উপজেলায় অন্তত অর্ধশত পোলট্রি হ্যাচারির পাশাপাশি অসংখ্য পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। মুরগির খাবার, ওষুধের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পোলট্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। ক্ষতির কারণে এর আগেই বন্ধ হয়েছে অসংখ্য খামার। এখন গরমের কারণে এভাবে মুরগি মারা যেতে থাকলে এ ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শাহীন পোলট্রি হ্যাচারিজ শাহীন বলেন, তীব্র গরমের কারণে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। যে মুরগির ১৮ সপ্তাহে উৎপাদনে যাওয়ার কথা, সেখানে ২৪ সপ্তাহেও উৎপাদনে যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে এই মুরগির পেছনে খরচ হয় তিন লাখ টাকা।

উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার খামারি মোছা. আমেনা খাতুনের খামারে সোনালী জাতের মুরগি আছে প্রায় দেড় হাজারের মতো। হিটস্ট্রোকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে।

তিনি জানান, মুরগিদের জন্য আলাদাভাবে বাতাসের ব্যবস্থা ও সেডের চালের ওপরে সারাদিন ঝর্ণা বসিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও মুরগির মৃত্যু বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া গরমের কারণে মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে।

খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম কমলেও মুরগির দাম একই আছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ ও লেয়ার এখন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এ দামে বিক্রি হয়েছে।

জুনিয়াদহ ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের খামারি শাহাবুল ইসলাম বলেন, আমার এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগি আছে। গত এক মাসে প্রায় ৫০টার মতো মুরগি মারা গেছে। এসব মুরগিকে বেশি শীতল জায়গায় রাখা যায় না, আবার বেশি গরমেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমের কারণে মুরগিকে সুস্থ রাখতে এক বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। মুরগির খাবার কমিয়ে দিলে উৎপাদন কমে আসবে এটাই স্বাভাবিক।

ভেড়ামারা উপজেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরোজ আলী বলেন, তীব্র দাবদাহে খামারের মুরগির ওজন ও ডিম উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ৪০ দিনে একটি ব্রয়লার মুরগি দুই কেজি ওজন ছাড়িয়ে যায়। এখন তা ১ কেজিও হচ্ছে না। আবার একই কারণে খামারিরা নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না। এতে বাচ্চার দাম কমে গেছে। কিন্তু হ্যাচারি মালিকদের ব্যায় বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা একেবারে পথে বসে যাবে।

ভেড়ামারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারজানা বলেন, খামারিদের দাবদাহ মোকাবিলায় বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো- শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম মুরগি রাখা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, সেডের চালে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা, নিয়মিত পানি ঢালা ও দুপুরে মুরগিকে খাবার না খাওয়ানো ইত্যাদি। গরম থেকে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ লিফলেট বিতরণসহ খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছে। মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিতেও বলা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]